ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাবিত বাজেট ঘিরে অসন্তুষ্টির আভাস – The Finance BD
 ঢাকা     মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২৩ অপরাহ্ন

ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাবিত বাজেট ঘিরে অসন্তুষ্টির আভাস

  • ০২/০৯/২০২৪

সামনের শরৎকালীন অধিবেশনে ব্রাসেলসের ইউরোপীয় কমিশনের সদর দপ্তরে শুরু হতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজেট নিয়ে আলোচনা, যার আকার হতে যাচ্ছে ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ইউরো। এ প্রস্তাবে অর্থ বণ্টনের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসতে পারে। যেখানে দরিদ্র দেশগুলো অর্থনৈতিক ঘাটতি পূরণে আগের মতো সাহায্য পাবে না, এর পরিবর্তে সংস্কারের ওপর নির্ভর করে অর্থ বণ্টন হবে বলে জানা যাচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় ইইউভুক্ত ২৭ দেশের একাধিক পক্ষে অসন্তুষ্টির আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
দীর্ঘমেয়াদি এ বাজেট আলোচনাকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে জটিল ও সংকটপূর্ণ আলোচনার একটি বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। ইউরোপীয় কমিশন প্রস্তাবিত সবচেয়ে বিতর্কিত পরিবর্তনের একটি হলো তথাকথিত ‘কোহেসন ফান্ড’ বা সমন্বিত তহবিল ব্যবহারের নিয়মে সংশোধন। জোটের ধনী ও দরিদ্র অংশের অর্থনৈতিক ব্যবধান কমানোর লক্ষ্যে এ তহবিলের অধীনে বছরে কয়েক বিলিয়ন ইউরো বিতরণ করা হয়।
এবারের পরিবর্তনের পক্ষে যুক্তি হলো, দেশগুলোকে সাশ্রয়ী ব্যবস্থায় যেতে হবে। এর অধীনে পেনশন, কর বা শ্রম আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। এছাড়া সুনির্দিষ্ট খাতে তহবিল স্থানান্তর হলে ব্যয় আরো কার্যকর হবে।
২০২৮-৩৮ মেয়াদের এ বাজেট নিয়ে কাজ করছেন এমন এক কর্মকর্তা কিছুদিন আগে জানিয়েছিলেন, যেসব দেশ ইইউতে দেয়ার চেয়ে বেশি অর্থ পেয়ে থাকেন, তাদের পরিবর্তিত বৈশ্বিক আবহ বুঝতে হবে। আগে কোনো শর্ত ছাড়াই অর্থের বরাদ্দ পেত তারা, কিন্তু সেই দিন এখন আর নেই। অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, ‘নীতি বদলের কারণে কোহেসন ফান্ডকে সংজ্ঞায়িত করার জন্য সুন্দর একটি মুহূর্ত এখন।’
কিন্তু এ ধরনের পরিবর্তন ইইউর সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে তীব্র মতবিরোধের কারণ হতে পারে। এমনকি সাধারণ বাজেটের আকার ও এটি কীভাবে ব্যয় করা উচিত সে বিষয়ে সর্বসম্মত চুক্তিতে পৌঁছতে কয়েক বছর লাগতে পারে।
২০২২ সালে শুরু হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধ ইউরোপের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তখন থেকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার বেশ চ্যালেঞ্জপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ব্রাসেলস এরই মধ্যে বর্তমান বাজেটের আকার বাড়াতে লড়াই করছে, যা ২০২৮ সাল পর্যন্ত চলবে।
দরিদ্র ও ধনী অঞ্চলের মধ্যে ব্যবধান দূর করতে ইইউর বিদ্যমান বাজেটের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ব্যয় হচ্ছে। কৃষিতে ভর্তুকি বাবদ খরচ হয় এক-তৃতীয়াংশ। বাকি অংশ গবেষণা তহবিল, উন্নয়ন সহায়তা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্যবহৃত সরঞ্জাম খরচের মধ্যে ভাগাভাগি হয়।
প্রস্তাবিত বাজেট শর্তগুলো মহামারীকালে ৮০ হাজার কোটি ইউরো তহবিলের মতোই হবে। এ তহবিল পাওয়ার জন্য তখনকার মতো দেশগুলোকে নির্দিষ্ট সংস্কার ও বিনিয়োগে সম্মত হতে হবে।
এ শতকের গোড়ার দিকে ইইউতে যোগ দেয়া মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের অনেক মনে করেন, সমন্বিত তহবিলে তাদের প্রবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিম ইউরোপীয় বিনিয়োগকারীদের জন্য তাদের অর্থনীতি উন্মুক্ত করার বিনিময়ে এ তহবিলের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। জার্মান ইকোনমিক ইনস্টিটিউটের এক জরিপ অনুসারে, জাতীয় আয়ের শতাংশ হিসাবে হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া ও বাল্টিক দেশগুলো এ তহবিলের শীর্ষ পাঁচ নিট প্রাপক। দেশগুলো তহবিল সীমিত করার যেকোনো পদক্ষেপের বিরোধিতা করতে পারে। আবার প্রাপ্তির তুলনায় যে দেশগুলোর অর্থ জোগানের পরিমাণ বেশি তারা এ নীতির সমর্থন করবে।
ইইউয়ের একজন জ্যেষ্ঠ এক কূটনীতিকের মতে, যে দেশগুলো বাজেটে বেশি অর্থ দেয় তাদের অবদান আরো বাড়ানোর একমাত্র উপায় হলো তহবিল গ্রহণকারী দেশের জন্য আরো শর্ত যুক্ত করা।
এ শরতে আলোচনা শুরু হলেও ২০২৫ সালে এ বাজেটের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব তোলা হবে। বর্তমানে কোনো দেশকে একক পরিকল্পনার অধীনে অনেক প্রকল্পে সাহায্য করা হয়। সে পদ্ধতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে ইউরোপীয় কমিশন। এছাড়া সাধারণ বাজেটের মেয়াদ সাত থেকে কমিয়ে পাঁচ বছরে নিয়ে আসাসহ একাধিক পরিবর্তন থাকতে পারে।
কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাপক সংস্কার জলবায়ু পরিবর্তন, স্বদেশী শিল্প বৃদ্ধি ও অপ্রত্যাশিত সংকটের প্রতিক্রিয়ার মতো অগ্রাধিকার পূরণে বাজেটের ব্যবহারকে আরো দক্ষ করে তুলবে। এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজেটে আমরা সাধারণ যেভাবে একমত হই, তাতে অনেক বেশি জড়তা তৈরি হয়েছে। আমাদের বাস্তবতার কাছাকাছি যেতে হবে।’
তবে প্রচলিত কাঠামোর পরিবর্তন বিভিন্ন ধরনের উদ্বেগ তৈরি করতে পারে বলে জানান আঞ্চলিক উন্নয়নবিষয়ক ইউরোপীয় সংসদীয় কমিটির ভাইস-চেয়ার লুবিকা কারভাসোভা। তিনি বলেন, ‘তহবিলসংক্রান্ত পরিবর্তনের অর্থ কী হতে পারে, তা নিয়ে ইইউর অনেক অঞ্চলে ব্যাপক উদ্বেগ রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কোনো স্থানীয় মেয়র চান না যে ইইউ থেকে আর্থিক প্রবাহ কেন্দ্রীয় সরকার সংস্কার পরিকল্পনা প্রণয়নের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করুক। বিশেষ করে কীভাবে একটি দেশ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করতে পারে, তার ওপর এ সুবিধা নির্ভর করে।’
বর্তমানে নিজের অর্থনৈতিক আকার অনুসারে, দেশগুলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজেটে অর্থায়ন করে। এর মাধ্যমে নিট অর্থ প্রদানকারী ও নিট সুবিধাভোগী শ্রেণী তৈরি হয়েছে। এর আকার ইইউর জিডিপির প্রায় ১ শতাংশ। তবে কিছু ইইউ কর্মকর্তার মতে, বর্তমান বাজেট এ ব্লকের অগণিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য যথেষ্ট নয়। এর জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলো থেকে আরো অর্থের জোগান দেয়ার প্রয়োজন।
Source : এফটি।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us