জাতিসংঘের পরমাণু নজরদারি সংস্থা বলছে ইরান তার পরিশোধিত ইউরিনিয়ামের মওজুদ সম্প্রসারিত করেছে। এই পরিশোধন অস্ত্র নির্মাণ স্তরের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এই পদক্ষেপটি আন্তর্জাতিক দাবির পরিপন্থি । তারা অবশ্য সংস্থাটির অভিজ্ঞ পারমাণবিক পরিদর্শকদের দেশটির পরমাণু কর্মসূচি পরিদর্শনের সুযোগ দিয়েছে।
বার্তা সংস্থাগুলি বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার গোপন প্রতিবেদনটি দেখেছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট পদে সম্প্রতি মাসুদ পেজেশকিয়ান নির্বাচিত হওয়ায় এবং নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে ইরানের সঙ্গে পরমাণু বিষয়ক কূটনীতি স্থবির হয়ে রয়েছে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি বৃহস্পতিবার সদস্য রাষ্ট্রগুলির কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে বলেন যে তিনি আশা করছেন “ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে তাঁর প্রাথমিক মত বিনিময়ের পর তিনি দ্রুতই ইরান সফরে যাবেন এবং তাতে এমন একটি নমনীয় অথচ গঠনমূলক সংলাপ হবে যা দ্রুতই একটি বস্তুনিষ্ঠ ফলাফলের দিকে নিয়ে যাবে।
প্রতিবেদনটিতে প্রকাশ পায় যে ১৭ই আগস্ট অবধি ইরানের কাছে ১৬৪.৭ কিলোগ্রাম ইউরেনিয়াম রয়েছে যার ৬০% পরিশোধিত আর এই হিসেব মে মাসে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার দেওয়া পরিমাণের চেয়ে ২২.৬ কিলোগ্রাম বেশি। ৬০% পরিশোধিত ইউরেনিয়াম অবশ্য অস্ত্র তৈরির জন্য ৯০% শতাংশ পরিশোধনের চেয়ে কম তবু ইরানি কর্মকর্তারা বার বার হুমকি দিয়েছেন যে তারা পরমাণু অস্ত্র তৈরির দিকে যেতে পারে।
গ্রসি সতর্ক করে দিয়েছেন যে অস্ত্র প্রস্তুত মানের কাছাকাছি যথেষ্ট পরিশোধিত ইউরেনিয়াম ইরানের কাছে রয়েছে যাতে তারা অনেকগুলির পরমাণু বওমা তৈরি করতে পারবে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার প্রতিবেদন দু বছর ধরে চলে আসা এ বিষয়টিতে কোন অগ্রগতি হয়নি। ইরান সংস্থাটির পরিদর্শকদের দেশটির পারমাণবিক স্থাপনার কাছে ভিড়তেই দিচ্ছে না। ইরান এ বিষয়টিরও কোন ব্যাখ্যা দেয়নি যে ঘোষিত পারমাণবিক এলাকার বাইরে কেন ইউরেনিয়ামের লক্ষণ পাওয়া গেছে।
তা ছাড়া প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে যে ইরান প্রধান গুরুত্বপূর্ণ পরিশোধনের স্থানগুলিতে সেন্ট্রিফিউজের অন্তত আটটি ক্লাস্টার যুক্ত করেছে। সেন্ট্রিফিউজ হচ্ছে সেই যন্ত্র যা ইউরেনিয়াম পরিশোধন করে। তবে , এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে এই নতুন যন্ত্রগুলি এখন্ও ইউরেনিয়াম পরিশোধন করছে না। ইরানের সঙ্গে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলির গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হয়েছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে । ইরান বরাবর বলে এসেছে যে তাদের এই কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে। ঐ চুক্তির বিনিময়ে ইরানের উপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তবে সেই চুক্তি ভেঙ্গে পড়ে ২০১৮ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্রের তদনীন্তন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের কারণে ইরান অস্ত্র তৈরির স্তরে ইউরেনিয়ামের ৬০% পরিশোধন করতে অবাধ সুবিধা পেয়ে গেল। (সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা)
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন