মার্কিন সরকারের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুসারে, দেশটিতে দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) শক্তিশালী ভোক্তা ব্যয়ের কারণে অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সম্প্রসারণ হয়েছে। এছাড়া জুলাইয়ের মূল্যস্ফীতি কমে আসায় ভোক্তাদের ওপর জেঁকে বসা মূল্যচাপ কিছুটা কমেছে। কিন্তু ভোক্তা ব্যয়ের সক্ষমতা দেশটির সব অর্থনৈতিক শ্রেণীর একই হারে বাড়ছে না। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মার্কিন পরিবারের মাস শেষে হাত প্রায় খালিই থাকছে। সম্প্রতি এ তথ্য দিয়েছে খুচরা বিক্রেতা চেইন ডলার জেনারেল।
কম মূল্য বা ছাড়ে পণ্য সরবরাহে বেশি পরিচিত ডলার জেনারেল। যুক্তরাষ্ট্রে ৪৮টি অঙ্গরাজ্য জুড়ে বৃহত্তম এ চেইনের ২০ হাজারের বেশি স্টোর রয়েছে। টেনেসিভিত্তিক ডলার জেনারেল ছোট স্টোরের মাধ্যমে কম দামে খাদ্যপণ্য ও গৃহস্থালি সামগ্রী বিক্রি করে, যাদের অনেক পণ্যের দাম ১ ডলার। এসব স্টোরের বেশির ভাগই প্রত্যন্ত শহর ও নিম্ন আয়ের মানুষ বসবাস করে এমন এলাকায় অবস্থিত।
এফটির এক প্রতিবেদন অনুসারে, কয়েক বছরের উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও মহামারীজনিত সঞ্চয় হ্রাসের পর অনেক গ্রাহক এখন আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত। একই সময় পণ্যের মজুদসহ নানা সমস্যায় বিপর্যস্ত হয়েছে ডলার জেনারেলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো। আর্থিক প্রতিবেদনে উল্লিখিত নেতিবাচক ফল বিনিয়োগকারীদের কোম্পানির ভবিষ্যৎ কর্মক্ষমতা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ফলে ডলার জেনারেলের শেয়ারদর প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে।
চেইন স্টোরটির নথিতে বলা হচ্ছে, কোম্পানির মূল গ্রাহকের দুটি ভাগ রয়েছে। এক ধরনের গ্রাহক নেতিবাচক বা অনিশ্চিত অর্থনৈতিক অবস্থায় যারা প্রথমে প্রভাবিত হন। অর্থনৈতিক অবস্থা ইতিবাচক দিকে গেলে যারা এর সুফল সবশেষে পান তারা রয়েছে দ্বিতীয় ভাগে। ডলার জেনারেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টড ভাসোস বলেন, ‘ডলার জেনারেলের প্রায় ৬০ শতাংশ ক্রেতা এ দুই ভাগের। বছরে ৩৫ হাজার ডলারের কম আয় করেন, এখন আর্থিকভাবে হাঁসফাঁস অবস্থায় আছেন তারা।’
তিনি আরো বলেন, ‘ক্রেতাদের বেশির ভাগই বলেছেন ছয় মাস আগের তুলনায় তারা আর্থিকভাবে খারাপ অবস্থায় আছেন। পণ্যের উচ্চ মূল্য, কম কর্মসংস্থান ও উচ্চ সুদহার নিম্ন আয়ের ভোক্তাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করেছে।’
ডলার জেনারেলের আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২ আগস্ট শেষ হওয়া প্রান্তিকে কমপক্ষে এক বছর আগে খোলা হয়েছে এমন স্টোরে বিক্রি বেড়েছে দশমিক ৫ শতাংশ, যা কোম্পানির নিজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ও ওয়াল স্ট্রিট বিশ্লেষকদের পূর্বাভাসের তুলনায় কম। এর মধ্যে প্রবৃদ্ধির পুরোটাই এসেছে খাদ্যের মতো আবশ্যিক পণ্য থেকে। পোশাক, ঋতুভিত্তিক ও গৃহস্থালি পণ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রবৃদ্ধি হয়নি।
নির্বাহীরা জানান, গত প্রান্তিকের প্রতি মাসের শেষ সপ্তাহে বিক্রি সবচেয়ে দুর্বল ছিল। সাধারণ ভোক্তাদের বিষয়ে ডলার জেনারেলের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা কেলি ডিল্টস বলেন, ‘মাসের শেষ দিকে তার হাত খালি হতে শুরু করে।’
অন্যদিকে মার্কিন খুচরা পণ্যের বাজারের বড় দুই কোম্পানি ওয়াালমার্ট ও টার্গেটের সাম্প্রতিক আর্থিক প্রতিবেদন ডলার জেনারেলের বিপরীত চিত্র তুলে ধরে। মধ্যবিত্তের পছন্দের কোম্পানি দুটি জানায়, সর্বশেষ প্রান্তিকে তারা শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ডলার জেনারেলের সর্বশেষ অর্থবছরে নিট বিক্রি ৪ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ২০ কোটি ডলার হয়েছে। কিন্তু পরিচালন মুনাফা ২০ দশমিক ৬ শতাংশ কমে ৫৫ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) মার্কিন অর্থনীতিতে ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা গেছে। এ সময় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৩ শতাংশ। মূলত শক্তিশালী ভোক্তা ব্যয় ও ব্যবসায়িক বিনিযয়োগ বৃদ্ধি প্রতিফলন দেখা গেছে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে।
এর আগে বাণিজ্য বিভাগের পূর্বাভাস ছিল, জুনে শেষ হওয়া প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রে জিডিপি ও পরিষেবা খাত ২ দশমিক ৮ শতাংশ হারে সম্প্রসারণ হবে। তবে সংশোধিত প্রতিবেদনে তা ৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
মার্কিন অর্থনৈতিক কার্যকলাপের প্রায় ৭০ শতাংশই ভোক্তা ব্যয়নির্ভর। বিভাগটি জুনে শেষ হওয়া প্রান্তিকে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে, যা বাণিজ্য বিভাগের প্রাথমিক পূর্বাভাস ২ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে অনেক বেশি। অন্যদিকে ব্যবসা খাতে বিনিয়োগ বাড়ার হার ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে নেতৃত্বে দিয়েছে সরঞ্জামে বিনিয়োগ, যা বেড়েছে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। প্রতিবেদন অনুসারে, অব্যাহত উচ্চ সুদহারের চাপ সত্তে¡ও মার্কিন অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেশটিতে নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, যেখানে ভোটারদের মনোভাবের অনেকটাই নির্ভর করে অর্থনীতির এসব সূচকের ওপর। ২০২২ সালের মাঝামাঝি মার্কিন মূল্যস্ফীতি চার দশকের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায়। তাই অনেক মার্কিন উচ্চ মূল্যের কারণে ক্ষুব্ধ ছিলেন। তবে কমেরিকা ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিল অ্যাডামস বলেন, ‘ভোক্তা ব্যয়ের দৃঢ় প্রবৃদ্ধি দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে এবং জুলাইয়ে ভোক্তাদের আস্থার বৃদ্ধি থেকে বোঝা যায় এ প্রবণতা বছরের দ্বিতীয়ার্ধেও (জুলাই-ডিসেম্বর) বাড়বে।’
Source : Ft News
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন