যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ সুদহার কমাতে পারে, এমন সম্ভাবনা দেখছেন দেশটির বিনিয়োগকারীরা। সুদহার কমালে বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফাও কমে আসতে পারে, এমন আশঙ্কায় কম ঝুঁকিপূর্ণ পরিসম্পদ ‘মানি মার্কেট ফান্ড’ দ্রুত হস্তান্তরযোগ্য স্বল্পমেয়াদি তহবিলে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দিয়েছেন তারা। চলতি মাসের শুরুতে এ ধরনের পরিসম্পদে প্রায় ৯ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে।
বিনিয়োগ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ইপিএফআরের তথ্য বলছে, ১-১৫ আগস্ট পর্যন্ত মানি মার্কেট ফান্ডে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৮২০ কোটি ডলার। মাসের প্রথমার্ধের হিসেবে এটি গত নভেম্বরের পর সর্বোচ্চ।
সংস্থাটির তথ্য বলছে, এ বিনিয়োগের বেশির ভাগই এসেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে। প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যদের পক্ষে বিনিয়োগ করেছে। অন্যদিকে ব্যক্তি বিনিয়োগের পরিমাণ এ তুলনায় কম ছিল।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফেড আগামী মাসে সুদহার ৫ দশমিক ৫০ থেকে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারে বলে বিনিয়োগকারীরা অনুমান করছেন। এতে ব্যাংকে জমা অর্থের বিপরীতে মুনাফা কমে যাবে। ফলে মানি মার্কেট ফান্ডে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হচ্ছেন তারা। কেননা এটি তুলনামূলক কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং এর লভ্যাংশও পূর্বনির্ধারিত।
সাধারণত সুদহার কমানোর সম্ভাবনা তৈরি হলে ট্রেজারি বিলের ইল্ড বা রিটার্নও কমে যায়। আনুষ্ঠানিকভাবে সুদহার কমানো হলে তা আরো কমে যায়। অন্যদিকে সে তুলনায় মানি মার্কেট ফান্ডে বিনিয়োগ করা নিরাপদ। কেননা এতে স্বল্পমেয়াদে সরকারি ঋণ ও সঞ্চয়পত্রের মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ পরিসম্পদে বিনিয়োগ করা হয়। ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি ইনস্টিটিউটের উপপ্রধান অর্থনীতিবিদ শেলি অ্যান্টোনিওভিচ বলেন, ‘আমরা যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি দেখেছি, তা আসলে দুই সপ্তাহের মধ্যে ঘটেছে। সেপ্টেম্বরে ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার কমানোর সম্ভাবনা অনেক বেশি, এ কারণেই বিনিয়োগ বেড়েছে।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যবসায়ীরা তাদের অর্থের জন্য নিরাপদ বিনিয়োগের সন্ধান করছেন। এক্ষেত্রে মানি মার্কেট ফান্ডে অর্থের প্রবাহ এটাই প্রমাণ করে শেয়ার ও স্বল্পমেয়াদি বন্ড তাদের জন্য ভালো বিকল্প হিসেবে উপস্থিত হয়েছে।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩ সালে সুদহার ২৩ বছরের উচ্চতায় পৌঁছে। সে সময়ও আর্থিক বাজার তহবিলগুলোয় অর্থের প্রবাহ বেড়ে গিয়েছিল। পরবর্তী সময়ে এটি মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলা করতে সাহায্য করেছে। ইপিএফআরের তথ্যানুযায়ী, গত বছরে মানি মার্কেট ফান্ডে নিট বিনিয়োগ ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়নে পৌঁছেছিল। এর পেছনে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও একই পথে হাঁটছেন।
ফেডারেটেড হারমেসের গ্লোবাল লিকুইডিটি মার্কেটসের চিফ ইনভেস্টমেন্ট অফিসার ডেবোরাহ কুনিংহ্যাম বলেন, ‘এটি একটি ঘটনা, যা সুদহার কমতে শুরু করলে প্রায়ই ঘটে। যেহেতু সুদহার কর্তনের প্রত্যাশায় শেয়ারের ইয়েল্ড (মুনাফা) আরো কমে যায়, বিনিয়োগকারীরা তখন দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক বাজার তহবিল থেকে আয় করতে পছন্দ করেন।’
যুক্তরাষ্ট্রের মানি মার্কেট ফান্ডের জন্য ৬০ দিন পর্যন্ত একটি ‘ওয়েইটেড এভারেজ ম্যাচুরিটি’ অনুমোদিত রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে তারা তিন-ছয় মাস মাস কিংবা আরো স্বল্পমেয়াদে বিভিন্ন মেয়াদের সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ করতে পারে।
ক্রেন ডাটার তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে মানি মার্কেট ফান্ডের গড় ইয়েল্ড ৫ দশমিক ১ শতাংশ। দেশটিতে এক মাসের ট্রেজারি বিলের ইয়েল্ড সামান্য বেশি ৫ দশমিক ৩ ও তিন মাসের বিলের ইয়েল্ড ৫ দশমিক ২ শতাংশ। (খবর: ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস)
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন