MENU
 মার্কিন স্টার্টআপ খাতে দ্রুত সম্প্রসারণের পর বড় ধস – The Finance BD
 ঢাকা     মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৭ অপরাহ্ন

মার্কিন স্টার্টআপ খাতে দ্রুত সম্প্রসারণের পর বড় ধস

  • ২০/০৮/২০২৪

ব্যবসায়িক সম্ভাবনার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় যুক্তরাষ্ট্রে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠার বড় ধরনের তোড়জোড় দেখা যায়। কিন্তু পরবর্তী অর্থনৈতিক রূপান্তরের প্রভাবে এ খাতে ব্যবসায়িক মডেল ও বাজার কৌশলের দুর্বলতা প্রকাশ পায়। এ কারণে দ্রুত সম্প্রসারণ ও বড় বিনিয়োগের পরও ২০২৩ সালে স্টার্টআপ বিনিয়োগে ব্যর্থতা বেড়েছে ৬০ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ব্যর্থতার পেছনে রয়েছে বিনিয়োগ পরিকল্পনার সঙ্গে নতুন চ্যালেঞ্জ ও পরিবর্তিত পরিস্থিতির মিল না থাকা।
এফটির এক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ ও ২০২২ সালে মার্কিন প্রযুক্তি খাত বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখে। এ সময় নতুন কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতাদের হাতে বড় অংকের নগদ অর্থ ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তহবিল ফুরিয়ে এলেও নতুন অর্থের সংস্থান নিয়ে সংকটে পড়েছেন তারা। ফলে স্টার্টআপগুলোর টিকে থাকার লড়াইয়ে হুমকির মুখে পড়েছে লাখ লাখ কর্মীর চাকরি, যা পুরো অর্থনীতিকে করে তুলেছে ঝুঁকিপূর্ণ।
মূলধন ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কার্টার তথ্যানুযায়ী, বন্ধ হয়ে যাওয়া স্টার্টআপের সংখ্যা দ্রুত হারে বাড়ছে। এমনকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) খাতে ভেঞ্চার ক্যাপিটালের (ভিসি) শত শত কোটি ডলারের বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
সংস্থাটি বিনিয়োগ সংগ্রহে সাহায্য করেছে এমন ২৫৪টি উদ্যোগ চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বন্ধ হয়ে গেছে। ২০১৯ সাল থেকে ব্যর্থতার হার নথিভুক্ত করে আসছে কার্টা। ওই সময়ের তুলনায় বর্তমানে স্টার্টআপের ব্যর্থতার পরিমাণ সাত গুণ বেশি।
এ ধরনের ব্যর্থতার সাম্প্রতিক নজির হলো আর্থিক খাতে পরিষেবা দেয়া প্রযুক্তি কোম্পানি ট্যালি। প্রতিষ্ঠার কয়েক বছরের মধ্যে ক্রেডিট ম্যানেজমেন্ট টুল কোম্পানিটির বাজারমূল্য দাঁড়ায় ৮৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আন্দ্রেসেন হোরোভিটজ ও ক্লেইনার পারকিন্সসহ বড় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল থেকে ১৭ কোটি ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু গত সপ্তাহে ট্যালির প্রতিষ্ঠাতা জেসন ব্রাউন জানান, সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক কোম্পানিটির হাতে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার মতো অর্থ নেই।
গত বছর বন্ধ হওয়া হাই-প্রোফাইল কোম্পানিগুলোর একটি লাইভ-স্ট্রিমিং ওয়েবসাইট ক্যাফেইন। এতে ২৫ কোটি ডলারের মতো বিনিয়োগ করেছিল ফক্স কর্প, অ্যান্ড্রিসেন ও সানাবিল ইনভেস্টমেন্ট। এছাড়া ২০২১ সালে বাজারমূল্যে ৪০০ কোটি ডলারে উন্নীত হওয়া স্বাস্থ্যসেবা স্টার্টআপ অলিভ এবং ২০২২ সালে ৩৮০ কোটি ডলার বাজারমূল্য পাওয়া ট্রাকিং কোম্পানি কনভয় বন্ধ হয়ে গেছে গত বছর।
২০২১ সালে চালু হয় অফিস পরিষেবাদাতা উইওয়ার্ক। স্টার্টআপটি সফটব্যাংক এবং এর ভিশন ফান্ড থেকে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার ঋণ ও ইকুইটি সংগ্রহ করেছিল। বড় বিনিয়োগ সত্ত্বেও গত নভেম্বরে গুটিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে কোম্পানিটি।
স্টার্টআপ ব্যবসায় এ ধরনের পতনের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান উচ্চ সুদহার। ২০২২ সালে সুদহার বৃদ্ধির ফলে ঋণের পেছনে স্টার্টআপগুলোর খরচ বেড়ে যায়। বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ের ভিসি বিনিয়োগও কমে গেছে। এ ধরনের ঋণ প্রবাহে বড় ধরনের ভূমিকা রাখত সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক, সেটি দেউলিয়াত্বের মুখে পড়লে নতুন সংকট শুরু হয়।
২০২১ ও ২০২২ সালকে ধরা হয় স্টার্টআপের উত্থানের বছর। তখন বড় বড় উদ্যোগে অর্থ ঢালতে এগিয়ে আসেন বিনিয়োগকারীরা। এ বিষয়ে পরামর্শক সংস্থা ক্রুজ কনসালটিংয়ের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিলি জোনস জানান, উদ্যোক্তাদের বড় বিনিয়োগের জন্য চাপ দিতে থাকে ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টরা, ফলে কোম্পানির বাজারমূল্য বেড়ে যায়। কিন্তু ভিসি ও উদ্যোক্তাদের লক্ষ্য সবসময় এক বিন্দুতে মেলেনি।
বাজারের চ্যালেঞ্জ নিয়ে বর্তমানে বিপদের মুখে রয়েছেন কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতারা। কারণ হিসেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান মরগান স্ট্যানলির বিশ্লেষকরা ক্লায়েন্ট নোটে বলেছেন, ২০২১ ও ২০২২ সালে কোম্পানি ও অর্থ সংগ্রহ উভয়ই ছিল অস্বাভাবিক বড়। ফলে দেউলিয়াত্বের হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে ভিসি-সমর্থিত স্টার্টআপে কাজ করছে ৪০ লাখ মানুষ। এখন এ খাতে দেউলিয়াত্বের বৃদ্ধির হার শ্লথ না হলে ‘অর্থনীতির বাকি অংশে ঝুঁকি’ তৈরি হবে বলে জানান বিশ্লেষকরা।
কার্টার ইনসাইটস বিভাগের প্রধান পিটার ওয়াকার জানান, সর্বশেষ তহবিল সংগ্রহের দুই বছরের মধ্যে ফের অর্থ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে এমন কোম্পানির সংখ্যায় বেশি হ্রাস দেখা যাচ্ছে। গত দুই বছরে টিকে থাকার লড়াইয়ে স্টার্টআপগুলো খরচ কমিয়েছে। এর অর্থ হলো তাদের প্রবৃদ্ধির গতি কমে গেছে। এক সময় যেকোনো মূল্যে কোম্পানি সম্প্রসারণের পরামর্শ দিত ভিসি, এখন তারা তাৎক্ষণিকভাবে লাভজনক হওয়ায় পরামর্শ দিচ্ছে।
কিন্তু খরচ কমিয়ে প্রবৃদ্ধির লাগাম টানা সাধারণ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল মডেলের সঙ্গে মানানসই নয়।
কার্টার তথ্যানুসারে, ২০২১ সালে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছে এমন ভেঞ্চার ফান্ডের মাত্র ৯ শতাংশ চূড়ান্ত বিনিয়োগকারীদের কাছে মূলধন ফেরত দিতে পেরেছে। অথচ ২০১৭ সালের তহবিল যোগানদাতাদের মধ্যে এ হার ছিল এক-চতুর্থাংশ।
তবে শ্লথগতির পর সম্প্রতি স্টার্টআপে অর্থায়ন বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে এআই বিষয়ক স্টার্টআপগুলো অপ্রতিরোধ্য মনোযোগ পাচ্ছে। ক্রুজ কনসালটিংয়ের ক্লায়েন্টরা চলতি বছরে ২০০ কোটি ডলার সংগ্রহ করেছেন। হিলি জোনস জানান, এ অর্থায়নের তিন-চতুর্থাংশ পেয়েছে এআই স্টার্টআপগুলো। তবে এসব কোম্পানি ক্রুজের মোট গ্রাহকের এক-চতুর্থাংশেরও কম।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us