রাশিয়া ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা করে। পরের মাস মার্চে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) রাশিয়ায় তাদের ব্যাংকনোট নিষিদ্ধ করে। এরপরও প্রায় ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ২৩০ কোটি ডলার ও ইউরোর বিল রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছে। রাশিয়ার কাস্টমসের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এর আগে অপ্রকাশিত পরিসংখ্যানগুলো থেকে দেখা যায়, রাশিয়া নগদ আমদানিকে অবরুদ্ধ করে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সক্ষম হয়েছে এবং বাণিজ্য ও ভ্রমণের জন্য দরকারি সরঞ্জাম ব্যতীত ডলার ও ইউরোর ব্যবহার হ্রাস করার চেষ্টা করছে।
একটি বাণিজ্যিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্রাপ্ত রাশিয়ার ওই কাস্টমসের তথ্যে দেখা গেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে নগদ এ অর্থ রাশিয়ায় এসেছে, যেসব দেশ রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেনি। যদিও অর্ধেকের বেশি অর্থ কোন দেশ থেকে এসেছে, তা রেকর্ডে বলা হয়নি। রাশিয়াকে দেয়া নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সহায়তা করে এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য শাস্তির হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং ২০২৩ ও ২০২৪ সালজুড়ে তৃতীয় দেশের কোম্পানিগুলোর ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
চীনের ইউয়ান বর্তমানে মস্কোয় সর্বাধিক ব্যবসা করার বৈদেশিক মুদ্রায় পরিণত হয়েছে, যদিও রাশিয়ায় বৈদেশিক লেনদেনের উল্লেখযোগ্য অর্থপ্রদানের সমস্যা রয়ে গেছে। রাশিয়ার অ্যাস্ট্রা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের বিনিয়োগের প্রধান দিমিত্রি পোলেভয় বলেছেন, অনেক রাশিয়ান এখনও বিদেশ ভ্রমণের জন্য নগদে বৈদেশিক মুদ্রা চায়, সেইসঙ্গে ছোট আমদানি ও সঞ্চয়ের জন্যও চাহিদা রয়েছে। ডলার এখনও একটি নির্ভরযোগ্য মুদ্রা।
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী কর্তৃপক্ষ ফরেন অ্যাসেট কন্ট্রোল অফিস এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। ইউক্রেনে যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে লেনদেন নিষিদ্ধ করে। ওই দেশগুলোয় থাকা প্রায় ৩০০ বিলিয়ন বা তিন হাজার কোটি ডলারের সার্বভৌম রাশিয়ান সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে, যে সম্পদগুলোর বেশিরভাগই ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ছিল।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত ফেব্রুয়ারিতে নতুন একটি আইন পাস করেছে। নতুন আইনটির আওতায় রুশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাজেয়াপ্ত সম্পদের ওপর করা লাভের পরিমাণ আলাদা করে ইউক্রেনকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ জব্দকৃত রাশিয়ার সম্পদ ইউক্রেনের সহায়তায় কাজে লাগাবে ইইউ।
এমন পদক্ষেপের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া।
রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়বে। দেশটির ক্ষতি বাড়ছে। এ কারণে ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান যুদ্ধ এগিয়ে নিতে মস্কোর জন্য তার অস্ত্রশস্ত্র আবার সংগ্রহ করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার বাণিজ্যে প্রভাব পড়েছে। ফলে রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে ধ্বংসপ্রাপ্ত অস্ত্র ঠিক করতে বা আরও অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ আমদানি করতে পারছে না। ইউক্রেনের অগ্রগতির মুখে মস্কোর বাহিনী পশ্চাদপসরণ করার কারণে রাশিয়া অনেক অস্ত্র পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে আসে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। তিনি বলেন, রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়বে। দেশটির ক্ষতি বাড়ছে। এ কারণে ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান যুদ্ধ এগিয়ে নিতে মস্কোর জন্য তার অস্ত্রশস্ত্র আবার সংগ্রহ করা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই রাশিয়ার ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। দেশটির বোঝা দিন দিন বেড়ে চলেছে। পশ্চিমা মিত্ররা রাশিয়ার অর্থনীতি ও তার যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে দুর্বল করার জন্য নিষেধাজ্ঞাগুলো আরও কঠোর করার নানা উপায় খুঁজছে।
তবে পশ্চিমাদের নানা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ার তেল বিক্রি অব্যাহত রয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি ইনস্টিটিউটের (আইইএ) তথ্য অনুসারে, রাশিয়ার মাসিক তেল বিক্রির পরিমাণ ইউক্রেন যুদ্ধের আগের পর্যায়ে ফিরে গেছে।
Source : Reuters
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন