সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক দেশ মন্দার কারণে শীর্ষ অর্থনীতির তালিকা থেকে পিছিয়ে পড়েছে। মন্দার সেই আশঙ্কা থেকে যুক্তরাষ্ট্রও মুক্ত নয়। এমন পরিস্থিতিতে নতুন প্রভাবক হিসেবে যুক্ত করেছে দেশটির শ্রমবাজারের শ্লথগতি ও বৈশ্বিক শিল্পোৎপাদনে মন্থরতা। মন্দার এ আশঙ্কার মাঝে গত সপ্তাহে বিশ্বের ৫০০ ধনী ব্যক্তি ১৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার হারিয়েছেন।
প্রতিবেদন অনুসারে, শীর্ষ ধনীরা সম্ভাব্য মন্দার ক্ষতি এড়াতে তাদের কোম্পানির শেয়ার বিক্রি বাড়িয়েছেন। একই সময়ে বাজারে অনেক বেশি শেয়ার ছেড়ে দেয়ায় বড় ধরনের দরপতন ঘটেছে।
সম্মিলিতভাবে পুঁজিবাজারের দরপতনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তারা। তাদের মধ্যে এগিয়ে আছেন অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস, তার ক্ষতির পরিমাণ দেড় হাজার কোটি ডলার। এটি তার ব্যবসায়িক ক্যারিয়ারের তৃতীয় বৃহত্তম ক্ষতি। শুক্রবার বিশ্বের বৃহত্তম ই-কমার্স প্লাটফর্মের ৮ দশমিক ৮ শতাংশ দরপতনের পর জেফ বেজোস এ ক্ষতির শিকার হন।
কোম্পানির শেয়ারদর ৩ শতাংশ কমে যাওয়ায় ওরাকলের ল্যারি এলিসন হারিয়েছেন ৫০০ কোটি ডলার। একই সময়ে অ্যালফাবেটের সহপ্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন ও ল্যারি পেজ হারিয়েছেন ৩০০ কোটি ডলারের বেশি। গুগলের প্যারেন্ট কোম্পানিটি ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত দর হারিয়েছে।
ক্ষতি থেকে বাদ পড়েনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের প্যারেন্ট মেটাও। এর প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ ৩০০ কোটি ডলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ সময় কোম্পানিটির শেয়ারদর ২ শতাংশের কাছাকাছি হ্রাস পেয়েছে। ডেল টেকনোলজিসের শেয়ারদর ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হ্রাস পাওয়ায় কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ডেল প্রায় ৩০০ কোটি ডলার হারিয়েছেন।
টেসলার সহপ্রতিষ্ঠাতা ও এক্সের মালিক ইলোন মাস্ক বিশ্বের সবচেয়ে ধনী হিসেবে পরিচিত। তার ক্ষতির পরিমাণও কম নয়, ৬৫৭ কোটি ডলার। বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি (ইভি) নির্মাতা কোম্পানিটির শেয়ারে ৪ দশমিক ২ শতাংশের বেশি পতন দেখা গেছে।
এছাড়া শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকায় নাম লেখানো এলভিএমএইচের শীর্ষ নির্বাহী বেহনা আহনোঁ, মাইক্রোসফটের সাবেক শীর্ষ নির্বাহী বিল গেটস ও স্টিভ বালমার এবং বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের চেয়ারম্যান ওয়ারেন বাফেটের সম্মিলিত ক্ষতির পরিমাণ ৭০০ কোটি ডলারেরও বেশি।
২ আগস্ট প্রকাশিত মার্কিন শ্রম দপ্তরের প্রতিবেদন অনুসারে, গত মাসে বিশ্বের বৃহত্তম এ অর্থনীতিতে ১ লাখ ১৪ হাজার কর্মসংস্থান যোগ হয়েছে, যা জুনে ১ লাখ ৭৯ হাজার থেকে অনেক কম। অন্যদিকে অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাস অনুসারে, এ সময় ১ লাখ ৮৫ হাজার কর্মসংস্থান হওয়ার কথা ছিল। শ্রমবাজারের এ শ্লথগতি রাতারাতি শেয়ারবাজারে প্রভাব ফেলে।
এর আগে ধারণা করা হয়েছিল, জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ১ শতাংশে স্থিতিশীল থাকবে। কিন্তু শ্রম দপ্তরের প্রতিবেদন অনুসারে, জুলাইয়ে বেকারত্বের হার ছিল ৪ দশমিক ৩ শতাংশ, যা ২০২১ সালের অক্টোবরের পর থেকে সর্বোচ্চ।
শেয়ারবাজারের সাম্প্রতিক পতন সম্পর্কে আর্থিক পরামর্শক সংস্থা ডিভের গ্রুপের প্রধান নির্বাহী নাইজেল গ্রিন বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী আর্থিক বাজারগুলো অতিমাত্রায় উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে, প্রধান বাজার সূচকগুলো উল্লেখযোগ্য পতনের সম্মুখীন হচ্ছে এবং বিনিয়োগকারীদের মনোভাব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে।’
শ্রম দপ্তরের প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রযুক্তি সংস্থাকেন্দ্রিক নাসডাক কম্পোজিটের ২ দশমিক ৪ শতাংশ পতন ঘটেছে। গত ১০ জুলাই সর্বকালের শীর্ষ ট্রেডিং দেখেছে নাসডাক। এর পর থেকে সূচক মোট ১০ শতাংশ কমল।
দুই বছরের মধ্যে মার্কিন শ্রমবাজারের সর্বোচ্চ এ শ্লথগতির মাঝে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের পতন ঘটেছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ। এছাড়া শেষবার রেকর্ড শীর্ষে ওঠার তুলনায় কমেছে ৬ শতাংশ। অন্যদিকে ডাও জোনসের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজের পতন হয়েছে ১ দশমিক ৫ শতাংশ।
সর্বশেষ মাসগুলোয় এশিয়া, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে উৎপাদন খাতে শ্লথগতি দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উদ্বেগ তৈরি করেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনজুড়ে শিল্পোৎপাদনের মন্থর গতি।
সম্প্রতি সপ্তাহে প্রকাশিত মার্কিন শিল্পোৎপাদন প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফেডারেল রিজার্ভ সুদহার কমাতে দেরি করতে পারে বলে খাতজুড়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সর্বশেষ বৈঠকে সুদহার অপরিবর্তিত রাখলেও সেপ্টেম্বর নাগাদ কমানোর ঘোষণা দিয়েছে।
ডিভের গ্রুপের প্রধান নির্বাহী নাইজেল গ্রিন জানান, ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার কমানোর পরিকল্পনা বিনিয়োগকারীদের ব্যবসা কৌশল পুনর্মূল্যায়নে প্ররোচিত করছে। এর সঙ্গে আরো যোগ করেন, ‘উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের তথ্য সম্ভাব্য মন্দার ইঙ্গিত দিচ্ছে, যা নতুন উদ্বেগ তৈরি করছে। গুরুতর একটি মন্দা এড়ানোর প্রতিক্রিয়া হিসেবে সুদহার কমাতে দেরি করতে পারে ফেড।’
Source : দ্য ন্যাশনাল।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন