জনসংখ্যার হিসাবে গত বছর চীনকে ছাড়িয়ে গেছে ভারত। আন্তর্জাতিক বাজারে কর্মী সরবরাহেও দেশটির অবস্থান শীর্ষে, এ অনুসারে সম্প্রসারণ ঘটছে রেমিট্যান্স প্রবাহের। আগামী পাঁচ বছরের প্রবাসী কর্মীদের আয় লক্ষণীয়ভাবে বাড়বে বলে জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অন কারেন্সি অ্যান্ড ফাইন্যান্স (আরসিএফ) অনুসারে, ২০২৯ সাল নাগাদ ভারতে বার্ষিক রেমিট্যান্স ১৬ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এরই মধ্যে ভারত বিশ্বের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রাপক দেশ হিসেবে রেকর্ডের খাতায় নাম লিখিয়েছে। বিশ্বের মোট রেমিট্যান্সের ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ হিস্যা ভারতের, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে।
গত বছর প্রবাসী ভারতীয়রা ১১ হাজার ৫০০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। দেশটির জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অনুপাত ২০০০ সালের ২ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে বেড়ে গত বছর ৩ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এখন ভারতের জিডিপি অনুপাতে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রবাহের তুলনায় রেমিট্যান্সের হিস্যা বেশি। ২০২৩ সালে এফডিআইয়ের পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৯ শতাংশ। জিডিপির রেমিট্যান্সের এ বৃদ্ধি ভারতের বাহ্যিক আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করছে বলে মন্তব্য দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আগামীতে ভারত বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় শ্রম সরবরাহকারী হতে প্রস্তুত। ২০৪৮ সাল পর্যন্ত ভারতে কর্মজীবী জনসংখ্যা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এর বিপরীতে বিশ্বের উন্নত অর্থনীতিতে কর্মক্ষম জনসংখ্যা কমতে শুরু করেছে।
রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার জন্য এ প্রতিবেদন তৈরিতে কাজ করেছে দেশটির ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক অ্যান্ড পলিসি রিসার্চ (ডিইপিআর) ও অন্যান্য সংস্থা। সেখানে বলা হচ্ছে, ভারতীয় অভিবাসী কর্মীদের জন্য বৈশ্বিক চাহিদা আগামী বছরগুলোয় উচ্চ থাকবে, যা কর্মশক্তিকে ক্রমাগত সুসংহত করার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্সকে আরো টেকসই করবে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোবাইল মানি ও ডিজিটাল প্লাটফর্মের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী রেমিট্যান্স প্রবাহের হার ক্রমবর্ধমানভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। এর সুফল ভারত ভালোভাবে পাচ্ছে।
২০২৩ সালে বৈশ্বিক রেমিট্যান্স প্রবাহ ৮৫ হাজার ৭৩০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। এতে ১১ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স নিয়ে নেতৃত্ব দেয় ভারত। বাকি দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের আয়ের পার্থক্য ব্যাপক। তালিকায় পরের অবস্থানে থাকা মেক্সিকো, চীন ও ফিলিপাইন রেমিট্যান্স পেয়েছে যথাক্রমে ৬ হাজার ৬২০ কোটি, ৪ হাজার ৯৫০ কোটি ও ৩ হাজার ৯১০ কোটি ডলার।
জনসংখ্যার অনুপাতে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালে ভারতের ১ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ অভিবাসী হিসেবে অন্য কোনো দেশে বসবাস করছিল। ২০২১ সালে উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে ভারতের অর্ধেকেরও বেশি রেমিট্যান্স এসেছিল, একই সময়ে উত্তর আমেরিকার হিস্যা ছিল ২২ শতাংশ।
আরসিএফ প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বব্যাপী রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমেছে। আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশন এতে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। ভারতের ক্ষেত্রে রেমিট্যান্স প্রাপ্তির গড় খরচ চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা আগের প্রান্তিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) চেয়ে ৫ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশের চেয়ে সামান্য কম। কিন্তু টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য এসডিজি থেকে এখনো বেশি। এ লক্ষ্য অনুসার প্রতি ২০০ ডলার রেমিট্যান্স পাঠাতে খরচ হওয়ার কথা ৩ শতাংশ।
চলতি বছরের (জানুয়ারি-মার্চ) প্রান্তিকে ২০০ ডলার রেমিট্যান্স পাঠানোর বৈশ্বিক গড় খরচ দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশে। আগের প্রান্তিক ২০২৩ সালের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) খরচ ছিল ৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অর্থাৎ, দুই প্রান্তিকের মাঝে ব্যবধান থাকলেও এখনো রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ২০২৩ সালের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) প্রান্তিকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, কুয়েত, ইতালি ও বাহরাইন থেকে ভারতে রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ছিল। তবে থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্রবাসীদের অর্থ পাঠানোর খরচ ছিল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১০ শতাংশের বেশি।
রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচের পার্থক্য সম্পর্কে বলা হচ্ছে, সম্ভবত থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার আর্থিক খাতে ব্যাংকের আধিপত্যের কারণে খরচ বেশি ছিল। কারণ অন্য দেশগুলোয় মানি ট্রান্সফার অপারেটর (এমটিও) ও ফিনটেক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়েছে ব্যাংকগুলো। এমন প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে রেমিট্যান্স খরচও কমে আসে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, আন্তঃসীমান্ত রেমিট্যান্স প্রবাহের ডিজিটালাইজেশন লেনদেনের গতি ও স্বচ্ছতা আরো বাড়ালে খরচ কমে যাবে।
source: The Hindu
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন