যুক্তরাষ্ট্রের মোট জাতীয় ঋণের পরিমাণ ৩৫ ট্রিলিয়ন বা ৩৫ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। দেশটির ইতিহাসে যা প্রথম। অতীতে দেশটির ঋণের পরিমাণ কখনও এ পর্যায়ে পৌঁছায়নি।
এর আগে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ প্রথম ৩৪ ট্রিলিয়ন বা ৩৪ লাখ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। দেশটির রাজস্ব বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করে জানায়, দেশটির কংগ্রেস সদস্যরা আবারও ঋণ নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ ৩৩ ট্রিলিয়ন থেকে ৩৪ ট্রিলিয়ন ডলারে উঠতে খুব একটা সময় নেয়নি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেশটির জাতীয় ঋণ ৩৩ ট্রিলিয়ন ডলার স্পর্শ করে। এর ৪ মাসের মধ্যে তা ৩৪ ট্রিলিয়ন ডলার স্পর্শ করে। এর সাত মাসের মাথায় দেশটির জাতীয় ঋণ ৩৫ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেল।
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বে সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিচিত। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় (ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট) সম্প্রতি তাদের দৈনিক আর্থিক প্রতিবেদনে বিষয়টি প্রকাশ করেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ফেডারেল প্রকল্পগুলোয় প্রাথমিক প্রাক্কলনের চেয়ে বাস্তবিক ব্যয় বেশি হওয়ায় ঋণের পরিমাণ এ পর্যায়ে ওঠে গেছে, যা দেশটির অর্থনীতির জন্য একটি অশনিসংকেত। যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেসের বাজেট অফিস গত মাসে জানায়, যে হারে সরকারি ব্যয় বেড়ে চলেছে, তাতে ২০৩৪ সালের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ ৫৬ ট্রিলিয়ন তথা ৫৬ লাখ কোটি ডলারে পৌঁছাবে। উচ্চ সুদের হার যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তার ঋণের বোঝা পরিচালনা করা কঠিন করে তুলেছে।
কভিড-১৯ মহামারিতে চালু করা বেশ কিছু ফেডারেল প্রোগ্রাম যেমন-কর্মচারী রিটেনশন ট্যাক্স ক্রেডিট (এই সুবিধার আওতায় থাকা সরকারি কর্মচারীরা ঋণ নিয়ে ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ শোধ করলে হয়। বাকি ঋণ মওকুফ করে দেয়া হয়) খাতে জালিয়াতি ও অপব্যবহারের কারণে বাজেট বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি ব্যয় হয়েছে। ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট গত সোমবার বলেছে, তারা এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ২৩৪ বিলিয়ন বা ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ধার করেছে এবং এটি জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরও ৭৪০ বিলিয়ন বা ৭ হাজার ৪০০ কোটি ডলার ঋণ নেয়ার আশা করছে। অর্থমন্ত্রী (ট্রেজারি সেক্রেটারি) জ্যানেট ইয়েলেন গত জুনে বলেছিলেন, মার্কিন ঋণের বোঝা অর্থনীতির আকার বিবেচনায় যুক্তিসঙ্গত ছিল।
এদিকে, বাইডেন প্রশাসন সাম্প্রতিক বাজেটে ৩ লাখ কোটি ডলার ঘাটতি বাজেট প্রস্তাব করেছে, যা দেশটির বিগত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। মূলত উচ্চ আয়ের নাগরিক ও করপোরেশনগুলোর ওপর কর বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বাইডেন প্রশাসন এই বাজেট প্রস্তাব করেছে। নিজেদের পক্ষে সাফাই গেয়ে গত সোমবার হোয়াইট হাউস যুক্তি দিয়েছে, রিপাবলিকানরা ক্ষমতা গ্রহণ করলে জাতীয় ঋণ আরও খারাপ করবে।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণের সীমা বাড়ানো নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে কংগ্রেসে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান দলের সদস্যদের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা হয়। শেষ সময় ছিল ৫ জুন, তার মধ্যে জাতীয় ঋণ নিয়ে ঐকমত্য না হলে খেলাপি হয়ে যেত যুক্তরাষ্ট্র। শেষ পর্যন্ত তার আগেই সাময়িকভাবে জাতীয় ঋণসীমা স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়।
২০২৪ সালে ব্যয়ের জন্য প্রায় এক ডজন বিল কংগ্রেসে অনুমোদন না হলে ওয়াশিংটনের সরকারি সংস্থাগুলো একরকম শাটডাউনের পর্যায়ে চলে যাবে। এ বছর দেশটির প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেস নির্বাচন, এই পরিস্থিতিতে ঐকমত্য হওয়াও কঠিন। তবে আগামী ১০ বছরে রাজস্ব ঘাটতি আড়াই ট্রিলিয়ন ডলার বা আড়াই লাখ কোটি ডলার কমানোর পরিকল্পনা দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হাতে নিয়েছেন। সে জন্য তিনি বড় করপোরেশন ও ধনী মার্কিনিদের কর বাড়াতে চান। এছাড়া ওষুধ ও তেল কোম্পানিগুলোর জন্য ব্যয় হ্রাস করতে চান তিনি।
Source : দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন