বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন উড়োজাহাজ সংস্থা থেকে স্বাস্থ্যসেবা, শিপিং থেকে বাণিজ্যিক সংস্থার মতো অনেক প্রতিষ্ঠানই গত ১৯ জুলাই ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম ক্রাউডস্ট্রাইকের সফ্টওয়্যার আপডেটের ত্রুটির কারণে এমন পরিস্থিতি দেখা দেয়। ক্রাউডস্ট্রাইকের একটি অটোমেটিক আপডেটে ত্রুটির কারণে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ কম্পিউটার অচল হয়ে যায়। ফলে পরিবহন, ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্যসেবা, গণমাধ্যমসহ অনেক খাতে বিপর্যয় দেখা যায়।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউএস ফরচুন ৫০০ কোম্পানিগুলো (মাইক্রোসফট ব্যতীত) ৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ৫৪০ কোটি ডলারের আর্থিক ক্ষতিতে পড়বে। বীমা কোম্পানি প্যারামেট্রিক্স বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সফটওয়ার প্রতিষ্ঠান ক্রাউডস্ট্রাইকের সফ্টওয়্যারের ওই ত্রুটিপূর্ণ আপডেটের কারণে হঠাৎ উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। বিভিন্ন দেশের বিমান সংস্থা ফ্লাইট বাতিলের হিড়িক পড়ে যায়। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা এবং ব্যাংকিংসেবা খাতের কার্যক্রমও ব্যাহত হয়। বিশ্বজুড়ে প্রায় কয়েক ঘণ্টা ধরেই উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম নির্ভর বিভিন্ন কোম্পানির কম্পিউটার সিস্টেমে ত্রুটি দেখা দেয়।
এতে অনেক প্রতিষ্ঠান আর্থিক ক্ষতিতে পড়েছে। এ ঘটনায় বিশ্বের পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন প্রযুক্তিনির্ভর কোম্পানির দুর্বলতার বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ কোম্পানিই বিপাকে পড়েছে এবং তাদের বিকল্প কোনো ব্যবস্থাই ছিল না। এ সমস্যার কারণে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন কোম্পানির ফ্লাইট বাতিল হয়েছে, চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়েছে এমনকি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমও থমকে গেছে। যদিও পরবর্তী সময়ে ক্রাউডস্ট্রাইক আগের অবস্থায় ফিরতে সক্ষম হয়েছে তবে বিলম্বিত এবং বাতিল হওয়া ফ্লাইট, মেডিকেল অ্যাপয়েন্টমেন্ট, ব্যবসায়িক কার্যক্রম এবং অন্যান্য যেসব সমস্যা সমাধান করতে কয়েক দিন সময় লেগে যেতে পারে। তবে ভবিষ্যতে এমন সমস্যা পুনরায় দেখা দিলে কীভাবে তা দ্রুত কাটিয়ে ওঠা যাবে বা এর বিকল্প কি করা যায় সে বিষয়েও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ভাবছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
প্রায় ৮৩ বিলিয়ন বা ৮ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের কোম্পানি ক্রাউডস্ট্রাইক। অ্যামাজন, মাইক্রোসফটের মতো বিশ্বব্যাপী ২০ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছেন এই কোম্পানির। তবে হঠাৎ সফটওয়্যার আপডেটের ত্রুটির কারণে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেজন্য গ্রাহকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে ক্রাউডস্ট্রাইক। এক বিবৃতিতে ক্রাউডস্ট্রাইক তাদের গ্রাহক, ভ্রমণকারী এবং তাদের কোম্পানিসহ যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সবার কাছে গভীরভাবে ক্ষমা চেয়েছে।
ক্রাউডস্ট্রাইকের প্রধান নির্বাহী জর্জ কুর্তজ জানান, সমস্যা জানতে পারার পরই কারণ খুঁজে দেখার চেষ্টা শুরু হয়। সমস্যার সমাধানও করা গেছে। গ্রাহকদেরও সে অনুযায়ী পরামর্শ বার্তা পাঠানো হয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, গ্রাহকদের অনেকেই এখন আগের মতো কাজ করতে পারছেন। মাইক্রোসফট বলছে, উইন্ডোজ সফটওয়ার ব্যবহারকারী কম্পিউটারগুলোর মধ্যে ২ শতাংশের কম কম্পিউটার এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর-এম-আই-টি ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর মার্ক গ্রেগরি বলেন, এই ১ দশমিক ৮ শতাংশ কম্পিউটার হলো এন্টারপ্রাইজ কাস্টমার কম্পিউটার। সেজন্য জনজীবনে এত প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গাফলতির ফলে এ রকম পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে।
ম্যালওয়ার এবং সাইবার হামলা ঠেকানোর জন্য বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত ক্রাউডস্ট্রাইক টুল ব্যবহার করেন। কিন্তু তাদের একটি অটোমেটিক আপডেটের ত্রুটির কারণেই বিশ্বব্যাপী এত বড় একটি বিপর্যয় দেখা দিল। কম্পিউটারের পর্দা নীল হয়ে যাওয়া যাকে বলা হয়- ‘ব্লু স্ক্রিন অব ডেথ’, এ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি একটি ‘রিকভারি বুট লুপ’।
ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের বড় জোগানদাতা মাইক্রোসফটের অ্যাজুর ক্লাউডও এতে আক্রান্ত হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন সিডনির সেন্টার ফর সফটওয়ার অ্যান্ড সিকিউরিটি প্র্যাকটিসের পরিচালক ড. ডেভিড গ্লান্স বলেন, ব্যবহারকারীরা কোনো প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়াই তাদের ডিভাইসের নিরাপত্তার জন্য ক্রাউডস্ট্রাইকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নির্ভর করে থাকেন। সফটওয়ারের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায়ই কোনো একটি সরবরাহকারীর ওপর পুরোপুরি নির্ভর করে থাকে। তাই কোনো সমস্যা দেখা দিলে বিকল্প কোনো উপায় আর থাকে না। তিনি বলেন, একটি সফটওয়ার কোম্পানির কোনো সেবার ব্যবহার যত ব্যাপক হবে এতে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে তার কুফলও ততটাই ব্যাপক হবে।
খবর: রয়টার্স।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন