তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে বিল উত্থাপন করেছেন ডেমোক্রেটিক নেতারা। জ্বালানি কোম্পানিগুলো যাতে ওপেকের সদস্য দেশের সঙ্গে যোগসাজশ করে তেলের দাম বাড়াতে না পারে, সে লক্ষ্যে একটি আইন করতে চান যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কিছু আইনপ্রণেতা। দলের দুজন সদস্য এমন একটি বিল কংগ্রেসে পেশ করেছেন। ওপেকের সঙ্গে মিলে তেলের দাম বাড়ালে কোম্পানিগুলোকে দায়ী করার কথা বিলে বলা হয়েছে
তেল রপ্তানিকারক কয়েকটি দেশের জোট অরগানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম একপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক) বিশ্ববাজারে বিপুল পরিমাণ তেল বিক্রি করে। এ জোটের অন্যতম সদস্য সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক ও ইরান। এসব দেশে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি অপরিশোধিত তেলের মজুত রয়েছে। তেলের দাম বাড়ানোর জন্য ওপেক এবং সহযোগী কিছু দেশ বর্তমানে তেলের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। এর বাইরে ওপেকের সদস্য দেশগুলো হচ্ছে—ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডর, কঙ্গো, নাইজেরিয়াসহ মোট ১৪টি দেশ। পরে জ্বালানি তেল উত্তোলন ও রপ্তানি বাণিজ্যে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় দেশ রাশিয়া এ জোটের সদস্য হওয়ার পর সংস্থার নতুন নাম হয় ওপেক প্লাস।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে বিলটি এনেছেন সিনেটার এডওয়ার্ড মার্কি এবং প্রতিনিধি পরিষদ সদস্য নেনেট ব্যারাগান। এই বিলে বলা হয়েছে, ফেডারেল ট্রেড কমিশন যদি প্রমাণ পায়, কোনো জ্বালানি কোম্পানি ওপেকের সঙ্গে যোগসাজশ করছে, তাহলে তারা কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রিত জল ও স্থলভূমিতে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবে না।
গত মে মাসে ফেডারেল ট্রেড কমিশন পাইওনিয়ার ন্যাচারাল রিসোর্সেসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্কট শেফিল্ডকে এই বলে অভিযুক্ত করে যে তিনি কৃত্রিমভাবে তেলের দাম বাড়াতে ওপেক কর্মকর্তাদের সঙ্গে শত শত বার্তা আদানুপ্রদান করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করে যে সংস্থা, তারা ছয় হাজার কোটি ডলারে পাইওনিয়ার কেনার জন্য এক্সনমোবিলের প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল। কিন্তু স্কট শেফিল্ডকে এক্সনের পরিচালনা পর্ষদে যোগ দিতে নিষেধ করা হয়। এক্সন অবশ্য শেষ পর্যন্ত পাইওনিয়ার কিনে নেয়। কোম্পানিটি নতুন বিলটির বিষয়ে মন্তব্য দেয়ার অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
স্কট শেফিল্ড ফেডারেল ট্রেড কমিশনের অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। এক্সন এর আগে বলেছিল, তারা এই নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির কাছে ১১ লাখের বেশি নথি ও বিভিন্ন তথ্য জমা দিয়েছিল। তবে কমিশন তাদের ব্যবসার প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো উদ্বেগ জানায়নি। প্রসঙ্গত, প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম কমে আসায় এবং শিল্পখাতে পরিশোধন হ্রাস পাওয়ায় এক্সন মবিলের আয় বছরের প্রথম প্রান্তিকে কমেছে।
কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ বা প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকান পার্টির হাতে। অন্যদিকে, উচ্চকক্ষ সিনেটে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। সুতরাং এই বিলটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে নেই বললে চলে। কিন্তু কিছু আইনপ্রণেতা যে তেল কোম্পানিগুলোর ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে চান, তা এই বিল পেশের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।
গত মাসে সিনেট স্থানীয় তেল কোম্পানিগুলোর বিষয়ে একটি তদন্ত শুরু করে। উদ্দেশ্য ছিল তেলের দাম বাড়াতে তারা ওপেকের সঙ্গে সমন্বয় করছে কি না। তবে লবি গোষ্ঠী আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউট একে ‘নির্বাচনী বছরের চমক’ হিসেবে নাকচ করে দেয়। এডওয়ার্ড মার্কি যে বিল এনেছেন, তাতে তার সহযোগী হিসেবে রয়েছেন প্রতিনিধি পরিষেদের ১১ জন বামপন্থী ডেমোক্র্যাট সদস্য, যাদের মধ্যে রয়েছেন আলেক্সান্ড্রিয়া ওকাসিওুকরতেজ এবং রাউল গ্রিহালভা।
বিলের প্রধান কারিগর এডওয়ার্ড মার্কি। তিনি একটি বিবৃতিতে বলেছেন, কঠোর পরিশ্রমী আমেরিকানদের ব্যবহার করে মুনাফা করলে ‘বড় তেল কোম্পানি যাতে বড় পরিণাম ভোগ করে’ তা নিশ্চিত করতে এই বিলটি একটি ‘প্রথম পদক্ষেপ’। উল্লেখ্য, বিশ্ব কভিড-১৯ মহামারী থেকে বেরিয়ে আসার পর অস্বাভাবিকভাবে তেলের চাহিদা বেড়েছে। এই অতিরিক্ত চাহিদার ফলে ২০২৪ সালের জন্য ওপেকের পূর্বাভাস, প্রতিদিন ২৩ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল কিংবা ২ দশমিক ৪ শতাংশ তেল উৎপাদন প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধির চেয়ে কিছুটা কম হতে পারে।
Source: রয়টার্স।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন