পিছিয়ে থেকেও টপকে গিয়েছে চিন, আয়ের তালিকায় এখনও ‘তৃতীয়’ ভারত! – The Finance BD
 ঢাকা     মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৬ অপরাহ্ন

পিছিয়ে থেকেও টপকে গিয়েছে চিন, আয়ের তালিকায় এখনও ‘তৃতীয়’ ভারত!

  • ১৩/০৭/২০২৪

আয়ের নিরিখে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের তালিকা প্রস্তুত করে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। এখনও সেই তালিকায় ‘তৃতীয়’ হয়েই রয়ে গিয়েছে ভারত। এ বছরেও কোনও উত্থান হল না।
প্রতি বছরই বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের আয়ের ভিত্তিতে এই তালিকা প্রস্তুত করে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। গত ১৮ বছর ধরে তালিকায় ভারতের কোনও উত্থান হয়নি। একই জায়গায় রয়ে গিয়েছে নয়াদিল্লি।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের এই তালিকা তৈরি হয় বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের প্রত্যেকের বার্ষিক গড় আয়ের ভিত্তিতে। এর মাধ্যমে দেশগুলির অর্থনৈতিক অবস্থানের একটি আভাস পাওয়া যায়।
কী ভাবে এই শ্রেণিবিভাগ করে বিশ্ব ব্যাঙ্ক? তালিকাটি প্রস্তুত করার জন্য বিশ্বের সমস্ত দেশকে মূলত চারটি ভাগে ভাগ করে বিশ্ব ব্যাঙ্ক— উচ্চ আয়সম্পন্ন দেশ, উচ্চ-মধ্য আয়সম্পন্ন দেশ, নিম্ন-মধ্য আয়সম্পন্ন দেশ এবং নিম্ন আয়সম্পন্ন দেশ। পূর্ববর্তী ক্যালেন্ডার বছরের মাথাপিছু জিএনআই-এর উপর ভিত্তি করে প্রতি বছর ১ জুলাই এই তালিকা পরিমার্জন করা হয়। জিএনআই পরিমাপ করা হয় আমেরিকান ডলারে অ্যাটলাস পদ্ধতি অনুসারে প্রাপ্ত রূপান্তরগুলি ব্যবহার করে, যা বর্তমান আকারে ১৯৮৯ সালে চালু হয়েছিল। বিশ্ব ব্যাঙ্কের এই শ্রেণিবিভাগের লক্ষ্য একটি দেশের উন্নয়নের স্তরকে প্রতিফলিত করা। কোনও দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার সূচক হিসাবে অ্যাটলাস জিএনআই বিশ্বব্যাপী প্রচলিত পদ্ধতি।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের সদ্য প্রকাশিত ২০২৪-২৫ সালের তালিকায় ভারত রয়েছে তৃতীয় পর্যায়ে নিম্ন-মধ্য আয়সম্পন্ন দেশ হিসাবে। ২০০৬ সাল থেকে ভারতের এই অবস্থান বদলায়নি।
কিসের ভিত্তিতে দেশগুলির রোজগার বিশ্লেষণ করে বিশ্ব ব্যাঙ্ক? যে দেশের এক জন সাধারণ নাগরিক সারা বছরে গড়ে ৯৫,৫৫০ টাকা বা তার কম (১১৪৫ ডলারের কম) রোজগার করেন, সেই দেশকে নিম্ন আয়সম্পন্ন দেশের তালিকায় রাখা হয়।
কোনও দেশের এক জন নাগরিকের বার্ষিক গড় আয় ৯৫ হাজার টাকা থেকে ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত হলে, সেই দেশ বিশ্ব ব্যাঙ্কের বিচারে হয় নিম্ন-মধ্য আয়সম্পন্ন দেশ।
কোনও দেশের নাগরিকদের বার্ষিক গড় আয় ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা থেকে ১১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা হলে, সেই দেশকে বলা হয় উচ্চ-মধ্য আয়সম্পন্ন দেশ।
যে দেশের প্রত্যেক নাগরিক সারা বছরে ন্যূনতম ১২ লক্ষ টাকা আয় করেন, সেই দেশগুলিকে উচ্চ আয়সম্পন্ন দেশের তালিকায় রাখে বিশ্ব ব্যাঙ্ক।
সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাঙ্কের এই তালিকায় তাৎপর্যপূর্ণ উত্থান ঘটেছে রাশিয়ার। তারা এত দিন উচ্চ-মধ্য আয়সম্পন্ন দেশ ছিল। এ বার উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের তালিকায় প্রথমে নিম্ন আয়ের দেশ হিসাবেই ছিল ভারত। ২০০৬ সালে এক ধাপ উঠে তারা এসেছে নিম্ন-মধ্য আয়ের তালিকায়। তার পর থেকে ভারতকে আর উঠতে দেখা যায়নি।
অথচ, ভারতেরই পড়শি দেশ চিন বিশ্ব ব্যাঙ্কের তালিকায় গত কয়েক বছরে চড় চড় করে উঠেছে। নব্বইয়ের দশকে তারা ভারতের মতোই নিম্ন আয়ের দেশ ছিল। এখন ভারতকে টপকে গিয়েছে তারা।
কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্ব ব্যাঙ্কের তালিকায় নিম্ন-মধ্য এবং তার পরেই উচ্চ-মধ্য আয়সম্পন্ন দেশ হিসাবে স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে চিন। অর্থাৎ, সে দেশের নাগরিকদের বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ধারাবাহিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের তালিকায় চোখ রাখলে দেখা যাচ্ছে, উচ্চ আয়ের দেশ হিসাবে রাশিয়ার পাশাপাশি রয়েছে আমেরিকা। এ ছাড়াও সৌদি আরব, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি, স্পেন, ইটালি, পোল্যান্ড-সহ ইউরোপের আরও অনেক দেশ এই তালিকায় রয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে চিন। তা ছাড়াও উচ্চ-মধ্য আয়সম্পন্ন দেশের তালিকায় রয়েছে ব্রাজিল, পেরু, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, দক্ষিণ আফ্রিকা, কাজ়াখস্তান, ইউক্রেন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, তাইল্যান্ড, তুরস্ক, ইরাক, ইরান প্রভৃতি দেশ।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের বিচারে ভারতের মতো নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ তার পড়শিরাও। পাকিস্তান, বাংলাদেশও এই তৃতীয় ধাপেই রয়েছে। নিম্ন-মধ্য আয়সম্পন্ন শ্রীলঙ্কাও।
নিম্ন-মধ্য আয়ের তালিকায় এ ছাড়াও রয়েছে উজ়বেকিস্তান, কিরঘিস্তান, তাজিকিস্তান, মায়ানমার, বলিভিয়া এবং নাইজেরিয়া, মিশরের মতো আফ্রিকার একাধিক দেশ।
নিম্ন আয়ের দেশ অধিকাংশই রয়েছে আফ্রিকায়। ওই মহাদেশের বাইরে কেবল ইয়েমেন, সিরিয়া এবং আফগানিস্তান এখনও নিম্ন আয়সম্পন্ন।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের এই তালিকা কিন্তু অর্থনীতির মানদণ্ড নয়। বিশ্ব অর্থনীতির নিরিখে এবং জিডিপির বিচারে অনেকটা এগিয়ে ভারত। জিডিপির তালিকায় ভারতের অবস্থান সারা বিশ্বে পঞ্চম।
সবচেয়ে বড় অর্থনীতির অধিকারী এখন আমেরিকা। তার পরেই চিনের স্থান। ভারতের আগে এ ছাড়া রয়েছে জার্মানি এবং জাপান। বিশেষজ্ঞদের মতে, চলতি অর্থবর্ষের শেষে ভারত টপকে যেতে চলেছে জাপানকেও।
কোন দেশের অর্থনীতি কত বড়, বিশ্ব ব্যাঙ্কের তালিকায় তা বিচার করা হয় না। বিশ্ব ব্যাঙ্ক অর্থের বণ্টনের দিকটিতে নজর দিয়ে থাকে। ভারতের মতো দেশে জিডিপি বেশি থাকলেও নাগরিকদের মধ্যে অর্থের বণ্টনে বৈষম্য রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, সেই কারণেই ভারতে সকলের হাতে সমান সংখ্যক টাকা পৌঁছয় না। কিছু সংখ্যক নাগরিকের হাতে অর্থ থাকলেও তার সমবণ্টনের অভাবেই ভারত আয়ের তালিকায় পিছিয়ে বলে মনে করেন তাঁরা।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা।

 

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us