লেবার পার্টি জয়ী হলে যুক্তরাজ্যে বাড়বে বিনিয়োগ – The Finance BD
 ঢাকা     মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ১১:৩৬ অপরাহ্ন

লেবার পার্টি জয়ী হলে যুক্তরাজ্যে বাড়বে বিনিয়োগ

  • ০৪/০৭/২০২৪

কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ৬৫০ আসনের মধ্যে ৪৮৪ আসন পাবে বলে জরিপ কোম্পানি সার্ভেশন জানিয়েছে। এতে দেশটি অতীতের ‘সেফ হেভেন’ মর্যাদা ফিরে পাবে বলে সিটি বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
যুক্তরাজ্যে আজ বৃহস্পতিবার সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে স্টারমারের দল জয়ী হলে বিশ্ববাজারে যুক্তরাজ্য অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্ত অবস্থানে থাকবে, পাউন্ডের তেজি ভাব দেখা যাবে, পুঁজিবাজারে উত্থান হবে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে, সেক্ষেত্রে লেবার পার্টি জয়ী হলে যুক্তরাজ্যের রাজনীতি স্থিতিশীল হবে বলে সিটি বিনিয়োগকারীরা দাবি করছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক গত মে মাসে ৪ জুলাইয়ে আগাম নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেন। তখন অনেকে বিস্মিত হয়েছিলেন এমন সময়ে কেন নির্বাচন? সুনাকের ঘোষণার কিছু দিন আগে যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে তার কনজারভেটিভ পার্টি। সেখানে বড় জয় পায় কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল লেবার পার্টি। তারও আগে থেকে বিভিন্ন জরিপে জনসমর্থনে লেবার পার্টির পেছনে থাকতে দেখা যাচ্ছিল ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টিকে (টোরি)। ফলে এমন নিশ্চিত পরাজয়ের পূর্বাভাসের মধ্যে আগাম জাতীয় নির্বাচন কেন, সে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
আগাম নির্বাচন ঘোষণার আগের কয়েকটি দিন দেশটির অর্থনীতি সুনাক সরকারের জন্য তুলনামূলক স্বস্তির ছিল। সে সময় অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলেই আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) যুক্তরাজ্যে প্রবৃদ্ধির নতুন পূর্বাভাস দিচ্ছিল এবং মূল্যস্ফীতি অবশেষে স্বাভাবিক পর্যায়ে ফেরার লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল।
চলতি বছর এপ্রিল-মে মেয়াদে যুক্তরাজ্য সরকার মূল্যস্ফীতি কমার খবর দেয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তখন বলেছিলেন, এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি কমে ২ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে, যা তার আগের মাসে ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ। মে মাসে মূল্যস্ফীতি আরও কমে দাঁড়ায় ২ শতাংশে, যা ছিল সরকারের নির্ধারিত লক্ষ্য। এর মধ্য দিয়ে প্রায় তিন বছরের মধ্যে যুক্তরাজ্য সরকার প্রথম তাদের মূল্যস্ফীতি কমানোর লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে সক্ষম হয়।
প্রধানমন্ত্রী সুনাক ক্ষমতায় বসেছিলেন মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকা, প্রবৃদ্ধি না থাকা এবং অভিবাসন সংকটের নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে। সেগুলো মোকাবিলায় তার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়। এ পরিস্থিতিতে সবকিছু ‘সঠিক পথে চলছে’ বলার একটি ভিত্তি পেয়ে যায় সুনাক সরকার। তারা যে দেশের জন্য কাজ করেছেন, তাদের পরিকল্পনা যে কাজে আসছে, তা দেশের মানুষকে বলা এবং দেশকে আরও নিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা কার আছে সেই প্রশ্ন দেশবাসীর সামনে রাখার পট প্রস্তুত হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন ঋষি সুনাক। ভোটের আগে প্রকাশ করার জন্য মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যানটি ছিল সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচকগুলোর একটি। যদিও এককভাবে মূল্যস্ফীতির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হলেও একেই একমাত্র পরিমাপক হিসাবে দেখছেন না অর্থনীতিবিদরা।
এ কারণে জরিপ কোম্পানি সার্ভেশনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবারের ভোটে কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বেশিরভাগ আসনে জয় পাবে।
এর আগে ১৯৯৭ সালে দেশটির সাবেক নেতা টনি ব্লেয়ারের নেতৃত্বে লেবার পার্টি ৪১৮টি আসনে জয়ী হয়ে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয় পেয়েছিল। এবার একই দল ওই ফলকে ছাড়িয়ে অনেক দূর যাবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এর বিপরীতে গত ১৪ বছর ধরে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতায় থাকা কনজারভেটিভ পার্টি মাত্র ৬৪টি আসন পেতে পারে। এটি হতে পারে ১৮৩৪ সালে রক্ষণশীল দলটির প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবচেয়ে খারাপ ফল।
এছাড়া ডানপন্থি রিফর্ম ইউকে পার্টি সাতটি আসন পেতে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। সার্ভেশন তাদের বিশ্লেষণে মাল্টিলেভেল রিগ্রেশন ও পোস্ট-স্ট্রাটাফিকেইশন (এমআরপি) কৌশল ব্যবহার করেছে। এতে স্থানীয় পর্যায়ের জনমত থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ের বড় ধরনের নমুনাগুলোও পর্যালোচনা করা হয়েছে।
জরিপকারী সংস্থাগুলো বলেছে, এই মডেলে জরিপ চালানোর বদলে জরিপের তথ্যগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। অন্য এমআরপি বিশ্লেষণগুলোও দেখিয়েছে, নির্বাচনে লেবার পার্টি এর চেয়ে আরও কম ব্যবধানে জয় পেতে যাচ্ছে, তবে সার্বিকভাবে কেউই এই ফলের অন্যথা হবে বলে পূর্বাভাস দেয়নি।
এর আগে রেডফিল্ড ও উইলটন স্ট্র্যাটেজিসের যুক্তরাজ্যজুড়ে পরিচালিত নিয়মিত জরিপে নির্বাচনে লেবার নিশ্চিত জয়ের পথে রয়েছে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল।
সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us