অর্থনীতি ডেস্ক: নতুন বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানিতে ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে নতুন বাজারে বাংলাদেশ মোট ৭.৭০ বিলিয়ন ডলার পোশাক রপ্তানি করেছে, আগের অর্থবছরের একই সময়ে যা ৭ বিলিয়ন ডলার ছিল।
এই সময়ে প্রধান নতুন বাজারগুলোর মধ্যে জাপানে পোশাক রপ্তানি ৬.১৪ শতাংশ বেড়ে ১.৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। আর অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় পোশাক রপ্তানি বেড়েছে যথাক্রমে ১৭.১৮ শতাংশ ও ১৪.৭৩ শতাংশ।
মধ্যপ্রাচ্যের বাজারেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সৌদি আরবে পোশাক রপ্তানি ৫৮ শতাংশ বেড়েছে। আর তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে যথাক্রমে ৫৪ শতাংশ ও ৪১.৯৬ শতাংশ।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বৈশ্বিক বাজারে সামগ্রিক রপ্তানি হয়েছে ৪০.৪৯ বিলিয়ন ডলার পৌঁছেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩৮.৫৮ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি এস এম মান্নান কচি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ‘সরকারি নীতি সহায়তা, বিশেষ করে নগদ প্রণোদনার সুবাদে ২০০৯ সাল থেকে নতুন বাজারে এ শিল্পের রপ্তানি বাড়ছে। ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার মতো ঐতিহ্যবাহী বাজারগুলোতে মন্দার মতো কঠিন সময়ে প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে নতুন বাজারে এই রপ্তানি শিল্পকে দারুণ সহায়তা করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে এই নতুন বাজারে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। নতুন বাজারে আমাদের বাজার হিস্যার ২০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছেছে। সরকার যদি ২০২৯ সাল পর্যন্ত নীতি সহায়তা, বিশেষ করে নগদ প্রণোদনা অব্যাহত রাখে, তাহলে নতুন বাজারে আমাদের বাজার হিস্যা আরও বাড়বে। এটি আমাদের বাজারে বৈচিত্র্য আনতে সাহায্য করবে।’
কচি বলেন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, রাশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য বাজারে পোশাক রপ্তানিতে আরও প্রবৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। পোশাক রপ্তানিতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে প্রতিযোগী দেশগুলো যেরকম প্রণোদনা দিয়ে থাকে, বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের জন্যও সেরকম বিকল্প প্রণোদনা চালু করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ২০০৭ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণ হওয়ার পরও ভারত তার রপ্তানিকারকদের নানা ধরনের প্রণোদনা দিয়ে আসছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের সার্বিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪.৯৭ শতাংশ। ইপিবির তথ্যানুযায়ী, ইইউতে মোট রপ্তানি হয়েছে ১৯.৯০ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধি ৩.৬৬ শতাংশ।
স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড ও ডেনমার্কে তৈরি পোশাক রপ্তানি যথাক্রমে ৬.০৭ শতাংশ, ৩.৪২ শতাংশ, ৩.৪২ শতাংশ, ১৭.৫১ শতাংশ, ২০.৬৫ শতাংশ ও ৩২ শতাংশ বেড়েছে।
তবে ইইউয়ের সবগুলো বাজারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়নি। ইইউর বৃহত্তম বাজার জার্মানিতে রপ্তানি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ের তুলনায় ৯.৪০ শতাংশ কমে ৫.০১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। একইভাবে ইতালিতেও পোশাক রপ্তানি ২.৪৫ শতাংশ কমেছে বলে ইপিবির তথ্যে উঠে এসেছে।
ইইউয়ের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে পোশাক রপ্তানি ১.৯০ শতাংশ কমে ৬.৮১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়ে। এদিকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্য ও কানাডায় পোশাক রপ্তানি হয়েছে যথাক্রমে ৪.৮ বিলিয়ন ডলার এবং ১.২৬ মিলিয়ন ডলার।
তৈরি পোশাক খাতের কথা বলতে গিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘আমাদের ইউরোপ-আমেরিকার বাজার যখন কোভিড-পরবর্তী পুনরুদ্ধার শুরু করে, তখনই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আমাদের ব্যবসা ফের মন্থর হয়ে পড়ে। আমাদের রপ্তানি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বটে, কিন্তু তারপরও আমরা অন্যান্য প্রতিযোগী দেশের তুলনায় ভালো প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছি।’
তবে এই সময়ে প্রতিবেশী ভারতের পোশাক রপ্তানি ২২.৪৪ শতাংশ কমেছে।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন