পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৯ সালে ফ্রান্সের বাজেট ঘাটতি ৪ শতাংশের ওপরে থাকবে ছবি: রয়টার্স
ধীর প্রবৃদ্ধির কারণে অর্থনৈতিকভাবে সংকটে রয়েছে ইউরোপের দেশগুলো। সরকারি ঋণ বৃদ্ধি ও বাজেট ঘাটতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া। এ পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম ফ্রান্স। বিশ্বের শীর্ষ ১০ অর্থনীতি থেকে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশটি ছিটকে পড়বে বলে সম্প্রতি পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। খবর আরটি। ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ২০২৯ সালের মধ্যে ক্রয়ক্ষমতা সমতা (পিপিপি) সূচকে বৈশ্বিক জিডিপিতে ফ্রান্সের হিস্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে। ২০২৩ সালে দেশটির হিস্যা ছিল ২ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু আগামী পাঁচ বছরে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশে নেমে যাবে। অর্থনৈতিক এ নেতিবাচক পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে দেশটির ক্রমবর্ধমান বাজেট ঘাটতি। আইএমএফের পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৯ সালে ফ্রান্সের বাজেট ঘাটতি ৪ শতাংশের ওপরে থাকবে। এ সময় সরকারি ঋণ জিডিপির ১১৫ শতাংশকে ছাড়িয়ে যাবে। সম্প্রতি ফ্রান্সের চলতি বছরের বাজেট পরিকল্পনার প্রতিক্রিয়ায় সতর্কবার্তা দিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন। দেশটির পরিকল্পনার সঙ্গে এ জোটের আর্থিক নীতির সম্ভাব্য দ্বন্দ্বের ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে। ইইউ জোর দিয়ে বলেছিল, ফ্রান্সের বর্তমান দৃষ্টিভঙ্গি বৈশ্বিক রেটিং এজেন্সিগুলোকে নেতিবাচক রেটিংয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এপ্রিলের শুরুর দিকে আইএমএফ জিডিপি ডাটাবেজ সংশোধন করেছে। এ অনুসারে, ২০২৯ সালে পিপিপির ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের বৈশ্বিক জিডিপির হিস্যা হতে পারে ২ দশমিক ২ শতাংশ। এর মাধ্যমে দেশটি বিশ্বের দশম বৃহত্তম অর্থনীতিতে শীর্ষস্থানে থাকবে। ধারণা করা হচ্ছে, এ সময় তুরস্কের অবস্থান হবে নবম। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বৈশ্বিক জিডিপিতে তুরস্কের হিস্যা ২ দশমিক শূন্য ৯-এ পৌঁছতে পারে। আইএমএফের পূর্বাভাস অনুসারে ২০২৯ সালে বৈশ্বিক জিডিপিতে প্রথম অবস্থানে থাকবে চীন, দেশটির হিস্যা হবে ১৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ। এরপর থাকবে যুক্তরাষ্ট্র (১৪ দশমিক ৭২), ভারত (৯ দশমিক ২৩), জাপান (৩ দশমিক ২১) ও ইন্দোনেশিয়া (২ দশমিক ৭৯)। এছাড়া শীর্ষ দশে ভূমিকা থাকবে জার্মানি (২ দশমিক ৭৭), রাশিয়া (২ দশমিক ৭১) ও ব্রাজিলের (২ দশমিক ১৯)। এদিকে চলতি বছরের জন্য দেয়া বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির সংশোধিত পূর্বাভাসে আইএমএফ বলেছে, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৩ দশমিক ২ শতাংশ, যা জানুয়ারিতে দেয়া পূর্বাভাসের তুলনায় দশমিক ১ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি। ২০২৫ সালেও বৈশ্বিক অর্থনীতি একই হারে অর্থাৎ ৩ দশমিক ২ শতাংশ প্রসারিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ঐতিহাসিক মানদণ্ডের তুলনায় বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির এ হার এখনো কম বলে জানিয়েছে আইএমএফ। কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছতে না পারার কারণ হিসেবে বিশ্বব্যাপী ঋণসংক্রান্ত ব্যয় বৃদ্ধি, কভিড-১৯ মহামারীর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও ভূরাজনৈতিক বিভক্তির মতো সংকটকে দায়ী করেছে সংস্থাটি। তবে এও বলছে, এখন স্থিতিশীলতায় ফিরতে শুরু করেছে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি। এ অবস্থায় উন্নত দেশগুলোকে কঠোর মুদ্রানীতি গ্রহণ করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ইউরোপের সরকারি ব্যয় নিয়েও সতর্ক করেছে আইএমএফ। সংস্থাটি বলছে, ইতালি ও ফ্রান্সের উচিত ঋণ নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনার চেয়ে দ্রুত ব্যয় কমানো। এছাড়া জার্মানির প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধারে নীতি সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে।
ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি
ট্যাগঃ
মন্তব্য করুন