ঈদ ও বৈশাখ অর্থনীতি উৎসবকে ঘিরে অর্থনীতিতে যুক্ত হয় নতুন চাহিদা – The Finance BD
 ঢাকা     মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ০৭:১৪ অপরাহ্ন

ঈদ ও বৈশাখ অর্থনীতি উৎসবকে ঘিরে অর্থনীতিতে যুক্ত হয় নতুন চাহিদা

  • ০৬/০৪/২০২৪

স্টাফ রিপোর্টার:
ঈদের আনন্দ এদেশের মানুষের অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে আছে বহুকাল আগে থেকেই। মুসলিম জাতির কাছে এটি এক কাক্সিক্ষত মহোৎসব হিসেবেই বিবেচিত। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম পালনের পর মুসলমানদের ঘরে উপস্থিত হয় ঈদুল ফিতর। বিশ্বের অনেক দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামোতে উৎসব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলোয় বড়দিনকে কেন্দ্র করে যেমন কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে।
রমজান মাস শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষের দৈনন্দিন জীবনধারায় পরিবর্তন আসে। এ আনন্দ উৎসবের সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হলো ঈদের কেনাকাটা। এ উৎসবের সঙ্গে তাই অর্থনীতির রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। ঈদ উৎসব ঘিরে অর্থনীতিতে যুক্ত হয় নতুন চাহিদা। আর এ চাহিদার জোগান দিতে প্রয়োজন হয় বাড়তি সরবরাহের। বাড়তি সরবরাহের জন্য প্রয়োজন বাড়তি উৎপাদন। আর অতিরিক্ত উৎপাদন আসে বাড়তি কর্মসংস্থান থেকে। এভাবে ঈদ এলেই প্রতি বছর দেশের অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি পায়।
আগামী ১০ বা ১১ এপ্রিল মুসলমানদের পবিত্র ‘ঈদুল ফিতর’ এবং ১৪ এপ্রিল বাংলা সালের নববর্ষ ‘পহেলা বৈশাখ’ উদ্যাপন হবে। একদিকে রোজার ঈদ, অন্যদিকে পহেলা বৈশাখের কেনাকাটা। মূলত এই দুই উৎসব ঘিরে অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এবারের ঈদ ও পহেলা বৈশাখে অন্তত ২ লাখ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে। ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে ঈদের অর্থনীতি।
উৎসবকেন্দ্রিক অর্থনীতির আকার কয়েক বছর ধরেই বাড়ছে। বাজার অর্থনীতির আকারও বড় হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-বোনাস, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স এবং ব্যক্তিগত তহবিলের অর্থ ঈদের কেনাকাটায় সাধারণত ব্যবহার করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের এক বিশাল বাজার। অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে নিজেদের উৎপাদিত পণ্যের পাশাপাশি বিদেশ থেকেও বিপুল পরিমাণ পণ্যসামগ্রী আমদানি করা হচ্ছে। ঈদের অর্থনীতিতে পোশাক, জুতা, ভোগ্যপণ্য ও ইলেকট্রনিকসের মতো শীর্ষ ১০ পণ্যের কেনাকাটায় বাণিজ্য হবে দেড় লাখ কোটি টাকার ওপর। এর বাইরে আরো অনেক রকম পণ্যের কেনাকাটা ও লেনদেন হবে ঈদ ঘিরে। যার পরিমাণ হবে প্রায় আরো ৫০ হাজার কোটি টাকা। করোনার প্রকোপ না থাকায় এবার অনেকেই বাড়তি কেনাকাটা করবেন। এছাড়া প্রতি বছর ঈদে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এভাবেই বড় হচ্ছে ঈদের অর্থনীতি।
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে দেশের বড়, মাঝারি, ক্ষুদ্র দোকানি ও ব্যববসায়ীরা হালখাতার আয়োজন করে থাকেন। দেশের দোকান মালিক সমিতির হিসাব মতে, এ জাতীয় দোকানের সংখ্যা দেশে মোট ২৫ লাখের মতো। প্রতিটি দোকানে যদি গড় খরচ ১০ হাজার টাকা হয়, তাহলে মোট খরচ হবে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সুতরাং পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে দেশের অর্থনীতিতে লেনদেন হবে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য থেকে জানা যায়, সারা দেশে পুরুষ, নারী ও শিশুদের পোশাকের দোকান রয়েছে ২৫ লাখ। এসব দোকানে প্রতিদিন সাধারণত ৩ হাজার কোটি টাকার পোশাক বিক্রি হয়। এফবিসিসিআইয়ের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, এবারের ঈদে পোশাক খাতে ব্যবসা হবে ১ লাখ কোটি টাকা। কিন্তু ঈদুল ফিতরের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে এ বিক্রয় এক লাফে তিন-চার গুণ বেড়ে যায়। সঙ্গে যুক্ত হবে ২০২৩ সালের চাকরিজীবীদের বোনাস। এ বছর কর্মজীবী মানুষেরা বোনাস তুলেছেন ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার কোটি টাকা। এ টাকার প্রায় সবটাই খরচ হয়ে যাবে বাজারে। সরকার ২০১৬ সাল থেকে বৈশাখী ভাতা চালু করেছে। দেশের সরকারি চাকরিজীবীরা মূল বেতনের ২০ ভাগ বৈশাখী ভাতা পেয়ে থাকেন। কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও এই ভাতা চালু হয়েছে। এই টাকাও যুক্ত হবে উৎসবে।
উৎসবকেন্দ্রিক শহরে, নগরে, বন্দরে, গ্রামে আর গঞ্জে—সবখানেই অর্থনীতির কর্মচাঞ্চল্য পরিলক্ষিত হয়। পোশাক থেকে খাবার, সেলুন থেকে পার্লার আর শপিং মল থেকে দর্জিবাড়ি—শুধু ব্যস্ততা আর ব্যস্ততা। বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে, স্টিমারে, বিমানে, লেগুনাতে—সবখানেই শুধু একটি জিনিসের হাঁকডাক। রমজান মাস থেকেই বেড়ে যায় দেশীয় বাজারে বিভিন্ন পণ্যের বেচাকেনা। রমরমা হয়ে ওঠে মাছ, মাংস ও মসলার বাজার। কর্মব্যস্ত শহুরে মানুষ বন্ধু ও পরিচিত জনকে সঙ্গে করে আয়োজন করে ইফতার পার্টির। অধিকাংশ সময়ই বেছে নেয় ঈদের ঠিক আগের ছুটির দিনগুলোকে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দলও আয়োজন করে ইফতারের। ঈদের অর্থনৈতিক প্রবাহ থেকে বঞ্চিত হয় না সমাজের ছিন্নমূল অংশও। আবশ্যকীয়ভাবে পালন করা বিশেষ দান ‘ফিতরা’ তাদের হাতে সামান্য হলেও অর্থের সংস্থান করে।
এবারও রোজার মাসে পহেলা বৈশাখ হওয়ায় এবং ঈদ ঘনিয়ে আসায় বৈশাখের আমেজ তেমন একটি দেখা যাচ্ছে না। অবশ্য এবার পহেলা বৈশাখ ও ঈদ বাজারের কেনাকাটা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। কিন্তু স্বাভাবিক সময়ের পহেলা বৈশাখকে ঘিরে বাণিজ্য হয় ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা। এবারের বাংলা নববর্ষের কয়েক দিন আগেই ঈদুল ফিতর। এই দুয়ের প্রভাবে চলতি এপ্রিল মাসের দ্বিতীয়ার্ধ জুড়েই বাজার সরগরম থাকবে। ঈদের ব্যবসা-বাণিজ্যের সুফলও পৌঁছে যাবে সব স্তরে। পোশাক, জুতাসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য, পরিবহন, পর্যটন, আপ্যায়ন, বিনোদনসহ বিভিন্ন খাতে ঈদ উৎসবের প্রভাব পড়বে। তাই অর্থনীতির গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় এই দুটি সপ্তাহ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

ক্যাটাগরিঃ অর্থনীতি

ট্যাগঃ

মন্তব্য করুন

Leave a Reply




Contact Us